‘মেম্বার মুছা নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক ◑
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাদারবনিয়া চাকমা পাড়ার এক উপজাতি ছেলে আমার দোকানে আসেন। সকাল সকাল ছেপটখালীতে আসার কারণও জিজ্ঞেস করি। এর কিছুক্ষণ পর ৮ নং ওয়ার্ড চকিদার আবুল মঞ্জুর এবং ৯ নং ওয়ার্ড চকিদার আবুল বশরের সাথে ছেলেটি ছেপটখালী কাব’বিন মালেক মাদ্রাসার উত্তর পাশে দাড়ায়।

মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দক্ষিণ দিক থেকে আসা একটি টমটম (ইজিবাইক) থামিয়ে দুই চকিদার দুইজন উপজাতি নারী ও পুরুষের কাছে থাকা একটি পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছিলেন। ঘটনাটি দেখার পর আমিও আরো কয়েকজন লোক ঘটনাস্থলের দিকে যায়।

আমাদের আসতে দেখে দুই চকিদার উপজাতি নারী পুরুষকে দ্রুত মেম্বার মুসার বাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। মেম্বার মুছার বাড়িতে ধৃত উপজাতি মহিলা ও যুবককে বসিয়ে রাখে। এ সময় মুছা মেম্বার বাড়িতে ছিলেন না।

এভাবেই গত ১৬ এপ্রিল জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বারের বাড়ি থেকে দশ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা দিচ্ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাহবুব আলম। উক্ত ঘটনায় মেম্বার মো: মুছাকে মামলায় ৩নং আসামী করা হয়। এ ঘটনায় তিব্র নিন্দা জানিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, দুই চকিদার ধৃত উপজাতিকে মেম্বারের বাড়িতে যখন নিয়ে যায়। খবর পেয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পর মেম্বার বাড়িতে আসেন। এ সময় চকিদার আবুল বশরকে না দেখে মেম্বার ফোন করে দ্রুত তাকে বাড়িতে আসতে বলে পুলিশকে ফোন করেছে কিনা জানতে চান। চকিদার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মুছা নিজের মোবাইল হাতে নেন। এমন সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হৈ ছৈ শুরু করেন। এ সময় পুলিশের আইসি উপস্থিত স্থানীয় লোকজনকে গালাগালি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে লোকজনের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। সেদিনের ঘটনায় মেম্বার মুছা কখনো জড়িত ছিলো না। ঘটনায় মেম্বার মুসাকে জড়িয়ে নিন্দনীয় কাজ করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে।

ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, ঘটনাটি সকাল সাড়ে নয়টার দিকের। সবাই দেখেছে কি হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ফলে ভবিষ্যতে কেউ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে কিনা জানি না। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে জনপ্রিয় মেম্বার মুছাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানাচ্ছি।

মাহবুব আলম বলেন, সেদিন যারা ইয়াবা বহন করেছিলো তারা আটক আছে। আর যারা ইয়াবাসহ উপজাতিকে ধরেছিলো (দুই চকিদার) তারাও আটক আছে। তাহলে মেম্বার মুসাকে মামলায় জড়ানো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মান্নান জানান, চকিদারের হাতে দুই জন উপজাতি আটকের সময় থেকে মেম্বারের বাড়ি থেকে ইয়াবা উদ্ধারের নাটক হওয়া পর্যন্ত আমি ছিলাম। আমি আজও বুঝতে পারিনি কেন তারা মুছার মতো একজন নিরাপরাধ লোককে মামলায় জড়িয়েছেন। চকিদার যখন চাকমাদের নিয়ে মেম্বারের বাড়িতে যান তখন তখনও মেম্বার তার সুপারি বাগানে কাজ করছিলেন। মেম্বার আসার পর পুলিশকে ফোন দিয়েছে কিনা চকিদারের কাছ থেকে জানতে চেয়ে নিজেই ফোন করতে চেয়েছে। এ অবস্থায় আইসি এসে মুছা মেম্বারের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন আচরণে আমরা নিজেরাই হতভম্ব।

কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সমাজ সেবক শফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, একটা সময় ছিলো মনখালী এলাকাটি ছিলো ডাকাত প্রবণ। মাসে অন্তত ৩০ দিনই ডাকাতি হতো। মুছা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কমিউনিটি পুলিশের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাতি বন্ধ করতে কাজ করেছে। তার নেতৃত্বে এলাকায় সব ধরনের অন্যায়, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী বন্ধ হয়েছে। তিনি অত্যান্ত সৎ একজন মেম্বার। অসহায়দের সহায় হয়েছেন। বিপুল ভোটে মেম্বার হওয়ার পর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এতে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনে তাকে হেয় করতে হয়তো প্রতিপক্ষরা এ ষড়যন্ত্র করিয়েছেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইয়াবা ব্যবসায়ী নারী ও পুরুষ আটক থাকার পরও মেম্বার মুছাকে জড়ানো আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদকারী একজন মেম্বারকে জড়িত করায় ভবিষ্যতে কেউ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে কিনা অন্তত দশবার ভেবে দেখবে। একটি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকান্ডে পুরো পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আবদুল মাবুদ বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দেয়ার কারনে মুছাকে আজ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ভিকটিম ধরা পড়েছে। তারা সবার সামনে জবানবন্দি দিয়েছেন, এর পরও কেন একই মামলা আমাদের অভিভাবক মুছাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে জানি না। লকডাউন না হলে মুছার জন্য রাস্তায় গিয়ে হাজারও মানুষ প্রাণ দিতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সকাল সাড়ে দশটায় ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নিরাপরাধ জনপ্রিয় মেম্বার মুছাকে মুক্তি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে মুছাকে মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছেন।